জাতীয় ডেস্ক:-যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর বিশিষ্ট ফুল চাষি শের আলী সরদার মারা গেছেন। জানা যায়, দেশে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করেছেন।
ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টার দিকে জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে তার।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চি করেছেন।
ঝিকরগাছার গদখালীকে কেন্দ্র করে যে ফুলের রাজ্য গড়ে উঠেছে তার উদ্যোক্তা ছিলেন শের আলী সরদার। তিনি ১৯৮২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এলাকায় প্রথম রজনীগন্ধা ফুল চাষ করেন।
সেই যাত্রা আর থামেনি।
আস্তে আস্তে তা পেয়েছে বিশালতা।
এলাকার প্রায় ছয় হাজার কৃষক এ ফুল চাষে জড়িয়ে পড়েছেন। বলা হয়, দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় গদখালীর ফুল দিয়ে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, শের আলী সরদারের বাবা আব্দুর রহমান সরদার এবং পাশের জেলা সাতক্ষীরার আব্দুল মাজেদ সরদার একসঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন সরদার নার্সারি। সেই নার্সারিতে কাজ করতেন শের আলী সরদার। সেখানে যশোরের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তার
ওই ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি আড়াই মণ রজনীগন্ধা ফুলের বীজ সংগ্রহ করে ৩০ শতক জমিতে রোপণ করেছিলেন। স্থানীয় চাষিদের দাবি, দেশের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এটিই ছিল প্রথম ফুল চাষ।
প্রথম আবাদেই ভালো ফলন হওয়ায় তিনি ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন বলে এলাকাবাসী জানান। রজনীগন্ধার পাশাপাশি শের আলী সরদার শুরু করেন গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরাসহ নানা জাতের ফুলের চাষ।
প্রথম আবাদেই ভালো ফলন হওয়ায় তিনি ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন বলে এলাকাবাসী জানান। রজনীগন্ধার পাশাপাশি শের আলী সরদার শুরু করেন গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরাসহ নানা জাতের ফুলের চাষ।
দেশব্যাপী বাজার সৃষ্টির অভিপ্রায়ে তিনি এরশাদের আমলে ঢাকার শাহবাগে মালঞ্চ নামে একটি ফুলের দোকানও স্থাপন করেছিলেন। এটাকে বলা হয় দেশের মধ্যে ফুলের প্রথম দোকান।
স্থানীয় চাষিরা জানান, শের আলী সরদারের দেখাদেখি স্থানীয় অনেক চাষি ধান, পাট, সবজি উৎপাদন ছেড়ে ফুল চাষ শুরু করেন। তারা শের আলী সরদারের কাছ থেকে লাভ করেন বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণও।
স্থানীয় ফুল চাষি সমিতির নেতাদের দাবি, বর্তমানে গদখালী, পাসিসারা এবং আশপাশের প্রায় ৭০টি গ্রামের মানুষ ফুলচাষে যুক্ত। এর মাধ্যমে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ফুল চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরাও। ফুল চাষে অনন্য অবদানের জন্যে তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সন্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
এসবই স্বম্ভব হয়েছে স্বপ্নবাজ শের আলী সরদারের হাত ধরে। বুধবার ভোরে তিনি বিশাল ফুলের সেই সাম্রাজ্যকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
পারিবারিক সূত্র উল্লেখ করে আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, জোহরবাদ পানিসারায় শের আলী সরদারের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আসরবাদ পানিসারার ফুলমোড়ে। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা।