ছায়েদ আহামেদ,হাতিয়া: নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে তিন ক্ষমতাধর ব্যক্তির দাপটে দুই শতাধিক কৃষক তাদের জমির অর্ধেক ধান হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। স্থানীয়দের অভিযোগ—ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের নেতৃত্বে থাকা শাহেদ মেম্বার, আশরাফ ও মোতালেব দীর্ঘদিন ধরে জোরজবরদস্তি, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার চালিয়ে আসছে।
প্রতিবেদক বন্দরটিলা, ছোঁয়াখালি ও নামারবাজার এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী বহু কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ধান কাটার মৌসুমে কৃষকেরা যখন মাড়াই শুরু করে, তখনই ভাড়াটে লোকজন নিয়ে হাজির হয় প্রভাবশালীদের অনুসারীরা। প্রতি দাগ জমি থেকে ধরে ধরে অর্ধেক ধান নিয়ে যায় তারা। প্রতিবাদ করলে মারধর, হুমকি কিংবা হেনস্তার শিকার হতে হয়।
পূর্বাচল গ্রামের সত্তরোর্ধ অলি উল্যাহ জানান, শাহেদ মেম্বার, আশরাফ ও মোতালেব এবং তাদের লোকজন দিদার, রাকিব ও জুম্মাকে পাঠিয়ে তার জমির অর্ধেক ধান লুট করেছে। বিষয়টি প্রতিবেশীদের কাছে বলায় শাহেদ মেম্বার লাঠি হাতে তাকে হুমকি দেয়। নবীর, নুর ইসলাম ও আব্দুর রহিমের ক্ষেত থেকেও একইভাবে ধান নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ছোঁয়াখালি এলাকার জমির মালিক জহির, নিজাম ও আলতাফ বলেন, তারা জমি চাষই বন্ধ করে দেবেন। তাদের দাবি, প্রতি দাগে ১৫ মণ করে ধান নিয়ে গেছে শাহেদ মেম্বারের লোকজন। তাদের বন্দোবস্তের জমি থেকেও কাগজপত্র দেখাতে বলে ধান নিয়ে গেছে।
মদিনা গ্রামের খবির উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা জানান, নিজের কেনা বাড়ির দরজা দিয়ে হাঁটতে পর্যন্ত দেন না মোতালেব। দরজা ব্যবহার করতে হলে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা না দিলে উলঙ্গ করে পেটানো বা জবাই করার হুমকি দেওয়া হয়।
সিডিএসপি এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, গত সপ্তাহে তাকে বেঁধে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে মোতালেব, মনাফসহ কয়েকজন। এরপরও রাতে তাদের ভাগ্নেরা বাড়িতে গিয়ে ঝামেলা করে। বুধবার তার ভাইয়ের জায়গায় ঘর করে দখলের চেষ্টা চলেছে।
বন্দরটিলা এলাকার ৬৫ বছর বয়সী আরেক ভুক্তভোগী জানান, ছাগল হারিয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে গেলে আশরাফ, ইব্রাহিম এবং শাহেদ মেম্বারের লোকজন তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা বেঁধে রাখে। পরে তার মেয়ের কাছ থেকে ৫০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়। কয়েকদিন পর আরও ৯৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হন।
এছাড়া বুধবার ভোররাতে ডুবার খাল এলাকার বাগানে জাল বিছিয়ে একটি বন্য মহিষ ধরে জবাই করে বন্দরটিলা বাজারে এনে মাংস বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে শাহেদ, আশরাফ ও মোতালেবের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ বিষয়ে যুবদলের সভাপতি আশরাফ বলেন, পূর্বের চেয়ারম্যানরা যে চর দখল করেছে তা নিয়ে কিছু এদিক সেদিক হয়েছে। মহিষের মালিক জাহেদের সাথে সঙ্গে মীমাংসা হয়েছে।
ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি শাহেদ মেম্বার বলেন, অপরাধ করে থাকলে প্রমাণ পেলে বিচার হতে পারে।
বিএনপি নেতা মোতালেব দাবি করেন, তিনি কোনো ধান লুট বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। যে নারী চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি ‘খারাপ’ মহিলা।
নিঝুম দ্বীপ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই সুমন বনিক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা কিভাবে নেবো। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনগত পদক্ষেপ নেবে।