ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া যদি জাতিসংঘ এগিয়ে নেয়, তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ‘বেছে বেছে হত্যা’ করার নির্দেশ দেওয়া উচিত হবে বলে ‘চরম উসকানিমূলক হুমকি’ দিয়েছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ও উগ্র-ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন গভির।
সোমবার ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে পিএ কর্মকর্তাদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অগ্রসর হয়, তবে উচ্চপদস্থ পিএ কর্মকর্তাদের ‘একজন একজন করে নির্মূল করা ছাড়া বিকল্প থাকবে না’। জেরুজালেম পোস্টসহ ইসরায়েলি কয়েকটি গণমাধ্যম খবরটি নিশ্চিত করেছে।
বেন গভিরের এই হুমকির নিন্দা জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্য ‘রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ধারাবাহিক উসকানি’। আন্তর্জাতিক সমাজকে বেন গভিরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।
প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় বলেছে, বেন গভিরের বক্তব্যের সম্পূর্ণ দায় ইসরায়েল সরকারের।
গাজা যুদ্ধ থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত একটি খসড়া প্রস্তাব সোমবার (১৭ নভেম্বর) নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে।
প্রস্তাবে গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার বাহিনী গঠনের অনুমোদন ও পুনর্গঠন এগোলে ফিলিস্তিনিদের ‘রাষ্ট্রগঠনের বিশ্বাসযোগ্য পথ’ তৈরির অঙ্গীকারের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। যে কারণে ইসরায়েলি নেতৃত্ব পরিকল্পনাটিকে রীতিমতো হুমকি হিসেবে দেখছে।
জাতিসংঘের পদক্ষেপ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে এগিয়ে নিলে পিএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বেন গভির। এমনকি তিনি দাবি করেছে, আব্বাসের জন্য নাকি ইতোমধ্যে ‘কেৎজিয়ত কারাগারে একটি একাকী সেল প্রস্তুত’ রাখা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা সমন্বয় করে। তবুও ইসরায়েলি নেতারা পিএর অধীনে কোনো সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকাঠামো মেনে নিতে নারাজ।
উসকানিমূলক মন্তব্যের জন্য কুখ্যাত বেন গভির গত শনিবার দাবি করেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ বলে আসলে কিছু নেই।’ তার ভাষায়— ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের ভূমিতে আরব দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীর সমষ্টি, যারা ‘সন্ত্রাসের বীজ বপন করে’।
তিনি ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমি ছেড়ে স্বেচ্ছায় অন্য দেশে চলে যাওয়ার প্রস্তাবেরও সমর্থন জানান— যা ট্রাম্পের পরিকল্পনাতেও ছিল। সমালোচকেরা এটিকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত জাতিহত্যার অংশ হিসেবে দেখছেন।
বেন গভির হোন বা নেতানিয়াহুর জোটের অন্য অতি-ডানপন্থী মন্ত্রী, এমনকি মধ্যপন্থী বিরোধীদের বড় অংশ— সবাই ‘সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধিতা’ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
অর্থমন্ত্রী বেনজালেল স্মোট্রিচ, যিনি কার্যত অধিকৃত পশ্চিম তীরের গভর্নরের দায়িত্বে আছেন, পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘একীভূত’ করার পরিকল্পনা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর।
ইসরায়েল স্পষ্ট করে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার প্রশাসন পিএকে দিতে তারা কোনোভাবেই রাজি নয়। তবে মার্কিন প্রস্তাবনায় পিএর ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়েছে— শর্ত হলো, পিএকে নিতে হবে ব্যাপক ‘সংশোধনমূলক উদ্যোগ’।