প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে। দরিদ্র আমেরিকানদের জন্য নির্ধারিত খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বন্ধের পরিকল্পনার প্রতিবাদে এই মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় চার কোটি নিম্নআয়ের মানুষের জন্য পরিচালিত খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (এসএনএপি), যা সাধারণভাবে ‘ফুড স্ট্যাম্প’ নামে পরিচিত, এটির অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে অঙ্গরাজ্যগুলো।
অঙ্গরাজ্যগুলোর দাবি, প্রশাসন যেন ৬০০ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল ব্যবহার করে এই কর্মসূচি চালু রাখে। অন্যথায়, দেশের কোটি কোটি মানুষ খাদ্য কেনার সামর্থ্য হারাবে, যা সংবিধান ও মানবিক নীতির পরিপন্থী।
তবে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানিয়েছে, তারা এই জরুরি তহবিল ব্যবহার করবে না এবং নভেম্বরের মধ্যেই অর্থ শেষ হয়ে গেলে কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে যাবে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই অর্থ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অন্য জরুরি প্রয়োজনে সংরক্ষিত, তাই তা ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। প্রায় এক মাস ধরে চলমান ফেডারেল প্রশাসনের অচলাবস্থা বা শাটডাউনেরও এখনো কোনো সমাধান হয়নি।
ইউএসডিএ এক ঘোষণায় বলেছে, সহজভাবে বললে, কূপ এখন শূন্য। অর্থাৎ খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ শেষ।
বিবিসির তথ্যমতে, ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেলদের নেতৃত্বে ২৫টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি এই মামলায় যুক্ত হয়েছে। তাদের যুক্তি, প্রশাসন যদি জরুরি তহবিল ব্যবহার না করে, তবে তা আইনবিরুদ্ধ হবে এবং দরিদ্র নাগরিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মামলায় বলা হয়েছে, এসএনএপি কর্মসূচি বন্ধ হলে জনগণের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাদ্য সহায়তা বন্ধ মানে অনাহার, অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিস্তার। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে একাগ্রতা হ্রাস, ক্লান্তি, বিষণ্নতা এবং আচরণগত সমস্যার মতো গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, কানসাস, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও উইসকনসিনসহ মোট ২৫টি অঙ্গরাজ্য এই মামলায় অংশ নিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এক বিবৃতিতে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন পৃথিবীজুড়ে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তখন তিনি নিজ দেশের কোটি মানুষকে অনাহারে ঠেলে দিচ্ছেন। এটা নির্মমতা, এবং এর মাধ্যমে তিনি আমেরিকান জনগণের প্রতি নিজের উদাসীনতা প্রকাশ করছেন।
অন্যদিকে ইউএসডিএ অভিযোগ করেছে, এই অচলাবস্থার জন্য ডেমোক্র্যাটরাই দায়ী। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, এখন ডেমোক্র্যাটদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি নিজেদের দলের চরমপন্থিদের তুষ্ট করবে, নাকি সরকার পুনরায় সচল করে মায়েরা, শিশু ও দরিদ্ররা যেন সময়মতো খাদ্য সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন নতুন নয়। তবে চলমান প্রশাসনিক অচলাবস্থা ও জরুরি তহবিল ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত এবার নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বড় সংকট ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।