মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন

শ্রমিক দিবসে চট্টগ্রাম শ্রমিক কল্যাণের বিশাল শ্রমিক সমাবেশ ও র‌্যালি

দিগন্তের বার্তা ২৪ ডেস্ক : / ৭২ বার পঠিত
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ৬:৪৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ডেস্ক:- বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের সব গৌরবময় অর্জনে শ্রমিক-জনতার রয়েছে বিশাল অবদান। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিকরাই সম্মুখযুদ্ধ করেছে।

জীবন দিয়েছে। বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে।

চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমার ভাই উমর ফারুকসহ দুই শতাধিক শ্রমিক শাহাদতবরণ করেছে।

‘শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জীবন, রক্ত ও ঘামের দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

অতএব, শ্রমিকদের নাগরিক অধিকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পূরণ করতে হবে। শ্রমিকদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং শ্রমিকসন্তানদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে।

আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে শ্রমিকবান্ধব। শ্রমিকদের যথাযথ অধিকার প্রদানের মাধ্যমেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আর শ্রমিকবান্ধব ও ইনসাফভিত্তিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শ্রমিকজনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে’।

বৃহস্পতিবার (১ মে) বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে চট্টগ্রাম পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে শ্রমিক সমাবেশ ও র‌্যালিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগর সভাপতি এসএম লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন।

বক্তব্য দেন জামায়াত মনোনীত চট্টগ্রাম ১০ আসনের প্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম ৯ আসনের প্রার্থী ডা. এ.কে.এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম ১১ আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ সফিউল আলম, চট্টগ্রাম ৮ আসনের প্রার্থী ডা. আবু নাছের, নগর ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মকবুল আহমদ ভূঁইয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শিহাব উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, কোতোয়ালী থানার উপদেষ্টা মোস্তাক আহমদ ও নগর ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন নগর ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এম আসাদ, প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম ও রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার প্রমুখ।

শাহজাহান চৌধুরী বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমার ভাই শ্রমিকনেতা উমর ফারুক হত্যার প্রধান আসামি হিসেবে ফ্যাসিবাদের জননী হাসিনার বিচার করতে হবে। কারণ, জুলাইয়ের সব হত্যাকাণ্ড ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে। জুলাই গণহত্যায় জড়িত চট্টগ্রামের ফ্যাসিবাদের ধারকদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা শ্রমিক-মালিক ভেদাভেদে বিশ্বাসী নই। আমরা শ্রমিক-মালিক সংঘাত চাই না। কিন্তু তাই বলে শ্রমিকদের শোষণ করা হবে, সেটা আমরা হতে দেবো না। শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস প্রতি বছর আমাদের ডাক দিয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রতি বছর ব্যাপকভাবে এই দিনটি পালন করা হলেও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের কোনো অগ্রগতি ঘটে না। বিশ্বের নানাপ্রান্তে শ্রমিকরা আজও নিষ্পেষিত-নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকরা অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত। স্বৈরাচার সরকারের সময় শ্রম অধিদপ্তরের কর্তারা নানা ঠুনকো অজুহাত ও নানাবিধ শর্তের বেড়াজালে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি। বিশেষত চট্টগ্রামে সে সময়ে যারা শ্রম অধিদপ্তরে নিয়োজিত ছিল, তারা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আজকে দেশ নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মানুষ মুক্তভাবে নিশ্বাস নিচ্ছে। বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। এই সময়ে এসে শ্রমিকরা যেন তাদের অধিকার আদায়ের সংগঠন অবাধভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, সেজন্য চট্টগ্রাম শ্রম অধিদপ্তরের কর্তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তিনি বলেন, জুলাই ৩৬ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের দেশ গড়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। হাজারো শহীদ ও অসংখ্য তরুণ, শ্রমিক-জনতার আত্মত্যাগ কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ গড়ার ও শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিক-জনতাকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এস এম লুৎফর বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রেরণার দিন। শ্রমিকদের রক্তাক্ত ইতিহাসের এই দিনে আমাদের একটাই শপথ, আমরা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। যেখানেই শ্রমিকরা নির্যাতিত হবে, সেখানেই শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন তার প্রতিকার করতে হাজির হয়ে যাবে। শ্রমিকজনতাকে সাথে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে ফেডারেশন ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশের পর শ্রমিক-জনতার র‌্যালি পুরাতন রেলস্টেশন থেকে শুরু হয়ে নিউমার্কেট, কোতোয়ালী মোড়, লালদীঘি ও বকশিবিট হয়ে আন্দরকিল্লা চত্বরে শেষ হয়।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর