হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি : ক্ষেতের ধানগাছ ক্ষেতেই দাঁড়িয়ে আছে। তখনো কাটা হয়নি। কিন্তু সেই ধান লুট করা হয়েছে বলে দেওয়া হয় লুটের মামলা। এই ঘটনায় মালিকের মোটরসাইকেল ভাংচুরসহ আরো কিছু অভিযোগ তুলে ধরা হয় মামলায়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে করা এই মামলা তদন্ত করতে সরেজমিনে গিয়ে এই ঘটনার কোন অস্তিত্বও পায়নি পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর ও ঘটনা সত্য বলে পুলিশী প্রতিবেদন দেয় এসআই প্রভাত কর্মকার। আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহন করেন। এতে উদ্দেশমূলক মামলায় জড়িয়ে হয়রানি শিকার হচ্ছে নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৯নং বুড়িরচর ইউনিয়নর পশ্চিম বড়দেইল গ্রামের একটি কৃষক পরিবার।
সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা খুঁজতে গিয়ে কথা হয় মামলার ৩নং সাক্ষী মো: সফিক ও ৪ নং সাক্ষী আব্দুল হকের সাথে। বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন আব্দুল হক। পশ্চিম বড়দেইল গ্রামের মামুন মার্কেটের একটি দোকানে দেখা হয় তার সাথে। কথা বলার এক পর্যায়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দি পড়ে শুনালে এই বক্তব্য তার নয় বলে জানান তিনি। ধান লুটসহ এই ধরনের কোন ঘটনা তিনি দেখেননি বলে জানান। একই ভাবে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে দেখা হয় মামলার সাক্ষী মো: সফিকের সাথে। তাকেও জবান বন্দি পড়ে শুনালে তিনি এসআই প্রভাত কর্মকার তার সাথে কোন কথা বলেন নি বলে জানান। এই জবানবন্দি এসআই নিজে মনগড়া লিখে দিয়েছেন বলে জানান সফিক।
এই বিষয়ে উপজেলা সদরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারের সদস্যরা। এতে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে মামলার দ্বিতীয় নং আসামী আজহার উদ্দিন বলেন, তাদের প্রতিবেশী বেলাল উদ্দিন নামে একজন গত ১৪ ডিসেম্বর হাতিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় তাকে সহ পরিবারের ৮ সদস্যকে আসামী করা হয়। মামলায় ঘটনা হিসাবে তাদের জমির পাশে বাদির জমি থেকে ধান কেটে নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বাধা দিলে বাদিকে সহ তার স্বজনদের পিটিয়ে আহত করার কথা বলা হয়। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি আরো বলেন, গত ২৪ ডিসেম্বর মামলাটি তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে আসেন দায়িত্ব প্রাপ্ত সাগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই প্রভাত কর্মকার। তিনি ঘটনাস্থলে এসে এই ঘটনার কোন অস্তিত্ব খোঁজে পাননি। তিনি ধান ক্ষেতে গিয়ে লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা ধান গুলো ক্ষেতে দেখতে পান। এছাড়া তিনি প্রতিবেশিদের সাথে আলাপ করে ঘটনার সত্যতা পাননি। ফিরে আসার পথে তিনি প্রতিবেদন সঠিক দিবেন বলে আমাদেরকে আশ^স্ত করেন।
কিন্তু গত ২৯ ডিসেম্বর এস আই প্রভাত কর্মকার আসামী ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ঘটনার অসত্য প্রতিবেদন আদালতে দেন। এমন অসত্য প্রতিবেদন দিয়ে গ্রামের নিরীহ মানুষদের হয়রানি করায় এসআই প্রভাত কর্মকারের বিরুদ্দে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ঘটনাস্থলের পাশে ছানাউল্যা মার্কেট। মার্কেটের চা দোকানের মালিক বেলাল জানান, ‘যে মামলাটি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ধরেনর কোন ঘটনা ঘটেনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসেছিলেন। তিনি অনেকের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু কিভাবে মিথ্যা এই ঘটনা সত্য বলে প্রতিবেদন দিল বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে’।
এই বিষয়ে কথা হয় মামলার বাদি বেলাল উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, আসামীদের সাথে তার জমি নিয়ে বিরোধ অনেকদিন থেকে। একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। কিন্তু যে ঘটনায় মামলা করা হয়েছে তা ঘটেছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
এই ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক উপ-পরিদর্শক ও বর্তমান এপিবিএন উত্তরায় কর্মরত প্রভাত কর্মকার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কুশল বিনিময়ের পর মামলার প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ফোন কেটে দেন।