কে এইচ মহসিন বান্দরবানঃ- বান্দরবানের লামায় সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যাক্তিগত বাগানে যাতায়াতের সুবিধার্থে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে স্থানীয় এলজিইডি অফিসের কর্মকতা, কর্মচারী বিশেষ করে কুমিল্লা সিন্ডিকেটের যোগসাজসে নির্মাণ করা হয়েছে ২কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যায়ে দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ।
অনুসন্ধানে জানা যায়,বান্দরবান জেলা এলজিইডি অফিস কর্তৃক উপজেলার সরই ইউনিয়নের জনশূন্য এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর ব্যাক্তিগত বাগানে যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০২২-২৩ অর্থবছরে একটি ব্রীজের দরপত্র আহবান করা হয়।
সে সময় ২কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যায়ে কাজটি বাস্তবায়নের অফিস কার্যাদেশ পেয়েছিলেন ইনু কনস্ট্রাকশন। আরো জানা যায়,ব্রীজের দুপাশে নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি টাকায় রাস্তা। এছাড়া ও বিশাল সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের নামে সরই ইউনিয়নে ১০০ একরের বেশি জায়গা কিনেছেন তিনি। মন্ত্রীত্বের প্রভাব খাটিয়ে আরও ৫শ একরের বেশি অসহায় মানুষের জায়গা জবর দখল করে নিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক ব্যাক্তি জানান, সাবেক মন্ত্রীর এ সকল অপকর্মের অন্যতম সহযোগি লামার এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ জাকির হোসেন মোল্লা ও সাবেক মন্ত্রী একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের মধ্যে ছিল খুব সখ্যতা। প্রায় ১যুগের ও বেশি সময় ধরে বহাল তবিয়তে একই কর্মস্থলে। তার আধিপত্যের কাছে অসহায় ছিল স্থানীয় বাসিন্দা ও তার অফিসের অন্যান্য কর্মকতা,কর্মচারীরা। এর মধ্যে বিগত ২৮-১২-২০২২ সালে বিভিন্ন অভিযোগের কারনে তাকে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর এলাকায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও সাবেক মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় এখনো তিনি লামা এলজিইডি অফিসে কর্মরত রয়েছে।
জানা যায়,নামমাত্র মূল্য দিয়ে ফৌজিয়া ইসলামের নামে ১শ একরের বেশি জায়গা কেনা হয়েছে। জমি কেনায় সরই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো.ইদ্রিস ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় জাল-জালিয়াতির অভিযোগও আছে। জমিতে যাতায়াতের রাস্তা,বৈদ্যুতিক সংযোগ, সীমানা পিলার মাছের প্রজেক্ট,গবাদিপশুর খামারসহ তৈরি করা হয়েছে থাকার জন্য বিলাস বহুল বাড়ি।
ভূমি অফিসের রেকর্ডরুমে ফৌজিয়া ইসলামের নামে অসংখ্য জায়গার জমানবন্দি রয়েছে। সম্প্রতি এসব জায়গার কাগজ দিয়ে নিজ নামে নিয়েছেন রাজার সনদও। এতে থেমে যায়নি সাবেক মন্ত্রী এই তাজুল ইসলামের দাপট। শতাধিক একর জায়গা ক্রয় করলেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় আশপাশের অসংখ্য গরিব ও অসহায় মানুষের জায়গা।
সরই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ছবুর বলেন, আমাদের তাজুল ইসলামের লোকজন বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। জায়গাজমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। মামলা দিয়ে এলাকায় থাকতে দেয়নি। দীর্ঘদিন অন্যত্র পালিয়ে ছিলাম। সরকার পতন হওয়ার পর আমরা নিজ বাড়িতে এসেছি। আমাদের জবর দখল করা জায়গা ফেরত চাই।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা হালিমা খাতুন বলেন, বাইরের লোক বান্দরবানে এসে জায়গা কিনতে না পারলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান,মেম্বারদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে জায়গা ক্রয় ও আমাদের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। আমরা দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি চাই,আমাদের জায়গা ফেরত চাই।
এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ জাকির হোসেন মোল্লা বলেন,আমার বাড়ি কুমিল্লা এটি ঠিক আছে কিন্তু সাবেক মন্ত্রীর সাথে আমার মত এত ছোট কর্মচারীর ব্যাক্তিগত সখ্যতা থাকার প্রশ্নই উঠে না। আমি ২০১১ সালের মে মাসে লামায় এলজিইডি অফিসে যোগদান করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সত্য নয়।
লামা উপজেলার ৫নং সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন,প্রত্যেক ইউনিয়নে জায়গার একটা হোল্ডিং নাম্বার থাকে। আমরা হোল্ডিং নাম্বার দেখে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রীর নামে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। তবে আইনগত জায়গা কেনার বিধান না থাকলেও ক্ষমতার প্রভাবে চাপে পড়ে সনদ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।
লামা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন,সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বাগানে নির্মাণ করা ব্রীজটি বান্দরবান জেলা এলজিইডি অফিসের নির্দেশে তত্বাবধান করেছি।এর বাহিরে কিছু আপাতত বলার সুযোগ নাই।
বান্দরবান জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন,স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যাক্তিগত বাগানে যাতায়াতের রাস্তাটি সরকারি গেজেট ভুক্ত রাস্তা। এখানে নির্মিত ব্রীজটিতে কোন মন্ত্রী বা ব্যাক্তি বিশেষ উপকৃত হল কি হলনা সেটি এলজিইডির দেখার বিষয় নয়।