শুভাশীষ দাশ,প্রতিনিধি রামগড় (খাগড়াছড়ি):ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার-পরিজনকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা আর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে নতুন চাকরির নতুন কর্মস্থল নেত্রকোনার কমলাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফার্মাসিস্ট পদে যোগদান করেছিলেন রামগড়ের বিজয় দেবনাথ(২৭)।
কিন্তু কর্মজীবন শুরুর মাত্র ৫৪ দিনের মাথায় নতুন কর্মস্থল থেকে টগবগে, সুর্শন এ তরুণ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরবে কখনও তা ভাবতে পারেনি পরিবার-পরিজন,প্রতিবেশি,বন্ধু-বান্ধব কেউই। অথচ অকল্পনীয় এ চরম বিষাদের ঘটনাই ঘটলো।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন এলাকার একটি বাসা থেকে গত শনিবার বিজয় দেনাথের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঐ ভাড়া বাসার একটি কক্ষে থাকতেন তিনি। ঐদিন দুপুরে বাসার জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় বিজয়ের লাশ উদ্ধার করে কমলাকান্দা থানার পুলিশ। তার এক সহকর্মীর তোলা ছবিতে দেখা যায় গ্রিলের সঙ্গে গলায় গামছাবাধা বিজয়ের নিথরদেহের পা দুটি ফ্লোরে লেগে ছিল।
আর ঐ ঘরের জিনিপত্র এলোমেলোভাবে ছড়ানোছিঁটানো ছিল। খবর পাওয়ার পর বিজয়ের বড় ভাইসহ স্বজনরা ছুটে যান কমলাকান্দায়। সোমবার(২ অক্টোবর) বিজয়ের লাশ নিয়ে রামগড়ের আনন্দপাড়া আবাসিক এলাকার বাড়ি ফিরেন তারা। বিজয় এ এলাকার ধীরেন্দ্র কুমার নাথের ছেলে। সোমবার তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম চলছে।
বিজয়ের বড় ভাই ব্যাংকার বিক্রম দেবনাথ বলেন,আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ জানালার গ্রিলের সাথে বেধে রাখা হয়। কিন্তু সেখানকার লোকজন সত্য আড়াল করতে আত্মহত্যা বলে প্রচার করছে।তিনি বলেন, নতুন চাকরি পাওয়ার পর বিজয় গত ৯ আগষ্ট কমলাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফার্মাসিস্ট পদে যোগদান করে। ওখানে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের স্থানীয় একটি ওষুধ পাচারকারি চক্রের টার্গেটে পড়ে সে।
ঐ চক্রের ওষুধ পাচারে সে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় ওরা তাকে টার্গেট করে। আমাদের সন্দেহ ওই চক্রই তাকে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, লাশ আনতে ওখানে যাওয়ার পর হাসপাতালের কারও কোন সহযোগিতা বা আন্তরিকতা ছিল না। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার তাদের সান্ত্বণা জানাতে দেখা পর্যন্ত করেননি।
বিজয়ের বড় বোন স্কুল শিক্ষিকা মায়া রাণি নাথ বলেন, যোগদানের কিছুদিন পরই ফোনে বিজয় কর্মস্থলে বড় সমস্যার মধ্যে আছে বলে জানায়। তিনি আরও বলেন, ঐ হাসপাতালে বিজয়েরে এক সহকর্মী ফোনে তাকে ওষুধপাচারকারি চক্রের বিষয়টি জানায়। তিনি বলেন, তারা আত্মহত্যার কথা বললেও আমরা মানতে নারাজ।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট এসোসিয়েশনের কেন্দ্রিয় যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সন্দেহ বিজয়কে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার বিচাররে দাবিতে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকল সরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্টদের কালো ব্যাচ ধারণ, ৪ অক্টোবর মানববন্ধন ও ৫ অক্টোবর স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি পালন করা হবে।এদিকে, কমলাকান্দা থানার এসআই ও মামলার আইও আমিনুল ইসলাম মুঠো ফোনে বলেন, সব দিক মাথায় রেখে গুরুত্বসহকারে তদন্ত কাজ চলছে। নেত্রকোনা আধুনিক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানাযাবে। ঐ প্রতিবেদনে হত্যার রিপোর্ট আসলেই পুলিশ সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।