নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ বাংলাদেশ-কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে আগামী ৫ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপি সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ যুগাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উৎসব সারাদেশব্যাপী মাহসাড়ম্বরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে উদ্যাপিত হবে। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক জেএম সেন হলে বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় বস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, অনাথ ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, গীতাপাঠ, সন্ধ্যারতি, জন্মাষ্টমী পূজা ও ভোগ, দেশ ও জাতির কল্যাণে সমবেত প্রার্থনা করা হবে। ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় বের করা হবে ঐতিহাসিক বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় বিপুল সংখ্যক ভক্ত সমাগম হবে। ধর্মমহাসম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য তুলে ধরেন জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ বাংলাদেশ-কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শিল্পপতি সুকুমার চৌধুরী।
এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত বছরে শারদোৎসবে কুমিল্লার কুমিল্লার পূজাম-পে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর রংপুর, পঞ্চগড় এবং এবং চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জেএম সেন হলের পূজোম-পসহ দেশের বিভিন্ন পূজোম-পে ভাঙচুর এবং সনাতনী সমাজের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে এবং কয়েকজন নিরীহ সনাতনী ভক্তকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যা পুরো বিশ্বের বিবেকবান মানুষকে নাড়া দিয়েছে। পরিষদ এসব নারকীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং এসব ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া ৬৪ জেলায় ৬৪টি মডেল মন্দির নির্মাণ, সারাদেশে বেদখল হওয়া মঠ, মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার এবং সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, সাম্প্রদায়িক হামলায় বিধ্বস্ত মঠ, মন্দি, ঘরবাড়ি সরকারি উদ্যোগে রামুর বৌদ্ধ বিহারের ন্যায় সেনাবাহিনী দ্বারা দ্রুত পুনঃনির্মাণ ও এরশাদ সরকারের আমলে সৃষ্ট বাংলা নববর্ষের তারিখ বিভ্রাটের অবসানে পঞ্জিকা মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শারদীয় দুর্গোৎসবে ৪ দিনের সরকারি ছুটিসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আওতায় বার্ন হাসপাতাল নির্মাণে প্রাচীন শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির ও মন্দিরের স্থাপনাসমূহ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ কতর্ৃৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ তপন কুমার সরকারকে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে যে হেনস্ত করা হয়েছে এবং সাভারের আশুলিয়ায় স্কুল শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার জন্যও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। এছাড়াও নড়াইলে মিথ্যা গুজব রটিয়ে সম্প্রতি একশ্রেণির সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠি হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন চালায়। এসব সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ ধর্ম ও কর্মের সমন্বয়ে গভীরভাবে বিশ্বাসী। এই পরিষদের মূল কথা তা হলো অহিংস মনোভাব ও সহিষ্ণুতা। সহিষ্ণু ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় চেতনা ও চিন্তা দেশের উন্নয়ন ও সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে। যুগে যুগে যে সমতা, বিদ্বেষহীনতা ও সহিষ্ণুতার অমর বাণী সনাতন ধর্ম প্রচার করেছে, তা অনুসরণ করলে মানুষ স্বদেশকে প্রেম ও মানবতার মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে পারে। বিগত ৩৯ বছর ধরে জন্মাষ্টমী পরিষদ-বাংলাদেশ সেই আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাড়ম্বরে বিভিন্ন কর্মসূচির আলোকে জন্মাষ্টমী পালন করে আসছে। এবছরও বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় মহাসাড়ম্বরে এবং মহামর্যাদায় জন্মাষ্টমী উৎসব উদ্যাপিত হবে। তিনি বলেন, অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমবর্ধমান এদেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই মুহূর্তে তারা এক ভীতিকর পরিবেশ-পরিস্থিতির মুখোমুখি। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগেও সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এতে আমরা হতাশ ও বিষ্মিত। আমরা এ মুহূর্তে সরকারি প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাই। আগামী নির্বাচনে আনুপাতিক হারে সংসদে সনাতনী সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য আসন বরাদ্দ রাখার দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পাঁচদিনব্যাপী বর্ণিল আয়োজনমালায় রয়েছে- ৫ সেপ্টেম্বর রহমতগঞ্জের রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণে সন্ধ্যা ৭টায় গীতা পাঠের মাধ্যমে মহতী মঙ্গলযজ্ঞের শুভ সূচনা। ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় ঐতিহাসিক বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রার উদ্বোধন, দুপুর ১২টায় মাতৃ সম্মেলন, বিকেল ৩টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিকেল ৫টায় সনাতন ধর্মমহাসম্মেলন, রাতে মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর মহানামযজ্ঞের শুভারম্ভ ও ষোড়শ প্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞ এবং ৯ সেপ্টেম্বর ভোরে মহানামযজ্ঞের পূর্নাহুতি। এছাড়া ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিষদ নেতাদের সাক্ষাৎ। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তপন কান্তি দাশ, অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার ও বিমল কান্তি দে, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম মহানগর জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শঙ্কর সেনগুপ্ত, পরিষদ কর্মকর্তা ডা. মনোতোষ ধর, সাধন ধর, লায়ন তপন কান্তি দাশ, প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ ও কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।