নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ মোংলায় সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হলেন মোংলা-রামপাল (বাগেরহাট-৩) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী চার আ’লীগ নেতা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে একই মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এ চার প্রভাবশালী নেতা। সোমবার বিকেলে মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ চত্বরে কৃষক লীগের ব্যানারে জাতীয় শোক সভায় এক মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হন এ সকল নেতারা। পরে দুই উপজেলার আ’লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-সাবেক রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মোঃ আবু সাইদ, মোংলা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারাদার, চিত্র নায়ক ও আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল খান, খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ আবু হানিফ। মোংলা-রামপাল উপজেলার আ’লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে সমাবেশে এ পরিবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
মনোনয়ন প্রত্যাশী শেখ আবু সাইদ, মোংলা-রামপালের এ আসনে আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে দুর্বল করে রাখার জন্য বর্তমান এমপি পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারকে দায়ী করে বলেন, আসনটি স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সেই থেকেই তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে এখানকার আ’লীগ এর অঙ্গ সংগঠনগুলো সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী একটি দল। কিন্তু এ আসনে নৌকার টিকিট নিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে এখানকার আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করে রেখেছেন এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে এলাকায় বিএনপি জামায়াতের কিছু লোককে দলে ঢুকিয়ে তাদেরকে দিয়েই এলাকার দলীয়সহ সকল উন্নযনমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। এ সুযোগে নামে মাত্র উন্নয়নের কথা বলে কাজ না করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাই এখানকার আ’লীগকে পুনরায় সু-সংগঠিত করার লক্ষ্যেই আজ আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শেখ আবু হানিফ ও ইদ্রিস আলী ইজারাদার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিমসহ সকল বর্ণ-ধর্মের লোকজন মিলে-মিশে বসবাস করে আসলেও বর্তমানে এখানে রাজনৈতিকভাবে দক্ষ নেতৃত্বের অভাব দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দলীয় ত্যাগী নেতা-কর্মীসহ সকল শ্রেণি-পেশার লোকই এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তারা আরো বলেন, আমি গত ১০ বছর ধরে রামপাল-মোংলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-৩ আসনটির প্রত্যেকটি পাড়া-মহলায় গিয়ে দলীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীসহ এলাকার লোকজনের কাছে গিয়ে দেখেছি দল ক্ষমতায় থাকার পরও তারা আজ কত অসহায়। তাই আজ সময় এসেছে পরিবর্তনের। কারণ দল পূর্ণাঙ্গভাবে শক্তিশালী না হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনা কষ্টকর হবে। আর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে আমাদের কারোই অস্তিত্বই থাকবে না।মনোনয়ন প্রত্যাশী চিত্র নায়ক শাকিল খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে সাথে ছিলাম। বেশ কয়েকবার বলেছি, মোংলা-রামপাল আসনটি পরিবর্তন করুন, না হলে দলীয় নেতা-কর্মীরা আজ অসহায়। এরকম চলতে থাকলে তারা কিন্তু এ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি এবং অঙ্গীকার করেছি পরিবর্তনের। এ সময় উপস্থিত আওয়ামী লীগের তৃণমূলের হাজারো নেতা-কর্মীর শ্লোগান আর মিছিলে শ্রমিক সংঘ এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। মোংলা উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শাহজাহান ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এই এম মিলন শিকারীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ওই চার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাড়াও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এইচ এম মিলন শিকারী, জেলা পরিষদের সদস্য সিকদার জলিল, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সরদার ইয়াসিন আরাফাত, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সজিব, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এমরান বিশ্বাস, সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদার, উদয় শঙ্কর বিশ্বাস, উৎপল মন্ডল, বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। এছাড়া যুবলীগ নেতা মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা শারুপ বাপ্পি, রাসেল, শেখ আল-মামুন, মুশফিকুর রহমান সাগর, লিটন হোসেন নিরবসহ বিপুল সংখ্যক স্থানীয় সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে ওই চার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
উলেখ্য ১৯৯৬ সাল মোংলা-রামপাল আসনে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের পরে তার সহধর্মিণী এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।