তুফান চাকমা, নানিয়ারচর উপজেলা প্রতিনিধি:-রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন ২৫ জন কৃষক।
মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। অল্প সময়ে ও লাভজনক ফসল হওয়ায় ইতিমধ্যে উপজেলার কৃষকদের মধ্যে সুর্যমূখী চাষের আগ্রহ বেড়েছে। কম সময়ের মধ্যে এবং অল্প অর্থ ব্যয় করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে চাষিরা।
নানিয়ারচর কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যমী কৃষকের হাত ধরে পরীক্ষামূলকভাবে নানিয়ারচর উপজেলা সদরে ২হেক্টর ও ৩টি ইউনিয়নের ২হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মতো উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সম্মিলিতভাবে প্রনোদনার মাধ্যমে সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।
সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য ভালো। সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়লে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে, চাষিরাও লাভবান হবেন। রবি ফসলের মধ্যে সূর্যমুখী অন্যতম তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটার পর বাগানগুলো অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে হাসছে অসংখ্য সূর্যমুখী। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ। এসব ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছিরা। এক ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে উড়ে যাচ্ছে আরেকটিতে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত ফুলের সৌন্ধর্য্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থীর সমাগম হচ্ছে। কেউ ফুলের সমাহার দেখতে আত্মহারা, আর কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান।
সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা রিন্টি চাকমা বলেন,
আসলেই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে এসে খুবই ভালো লাগছে। মনোমুগ্ধকর একটা ফুলের বাগান।
অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো সূর্যমুখী ফুলের বাগানে গিয়ে ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো। আজকে সৌভাগ্যক্রমে বাগান দেখতে আসলাম ইচ্ছে মতো ছবিও তোলা হলো।
নানিয়ারচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে ৩ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২৫ জন কৃষক ৪ হেক্টর জমিতে প্রণোদনার প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা শুরু করেছেন। আগামীতে আরো কৃষক বাড়বে আশাবাদী।
ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূইয়াদম গ্রামের কৃষক ত্রিজীবন চাকমা জানান, নানিয়ারচর কৃষি অফিস ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম অল্প জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে। বিকেল বেলায় অনেকে লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখতে আসেন এ সূর্যমুখী ফুলের বাগান। যারা দেখতে আসেন তারা সবাই বাগানের পাশে ছবি তুলেন এবং সময় কাটান। তা দেখে আমার খুবই আনন্দ লাগে।
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে অনেক লাভবান হতে পারবো।
নানিয়ারচর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: আহসান হাবিব বলেন, এ উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। আগামীতে আরো সূর্যমুখীর চাষ করবে কৃষকরা। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল।
তিনি আরো বলেন, আশা করছি ভালো ফলন হবে। আগামীতে এই উপজেলায় এ প্রকল্প থাকলে সূর্যমুখী ফুলের চাষ ব্যাপক হারে আরও সম্প্রসারিত হবে। প্রথমবার কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আমি আশাবাদী। কৃষকদের এসব তেল প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলে।